রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন

কম দামে প্লট বরাদ্দ দিয়ে লোপাট ৭০ কোটি টাকা

কম দামে প্লট বরাদ্দ দিয়ে লোপাট ৭০ কোটি টাকা

স্বদেশ ডেস্ক:

বাণিজ্যিক প্লটকে আবাসিকের দামে বরাদ্দ দিয়ে ৭০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার সংস্থাটির উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

দুদকের তথ্যমতে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) মিরপুর ডিভিশনের আওতায় বাণিজ্যিক ৪২ প্লটের মধ্যে ৯টি প্লটের ২৫ দশমিক ৭৬ কাঠা আবাসিক মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাণিজ্যিক প্লটকে আবাসিক দেখিয়ে কমদামে বরাদ্দ দেওয়ায় সরকারের ৭০ কোটি টাকা ক্ষতির ঘটনায় দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এর পর অভিযোগ অনুসন্ধানে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দিতে হলে নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দিতে হবে। কিন্তু জাগৃক ৯টি প্লটের শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাসিক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে চিড়িয়াখানা রোডে এসব প্লটের অবস্থান, যার প্রতি কাঠা জমির বাজারমূল্য আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। কিন্তু জাগৃকের বরাদ্দ নির্দেশিকা উপেক্ষা করে এসব প্লট আবাসিক হিসেবে প্রতি কাঠা ৫০ লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ডিভিশন ১-এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিলা খানম জাগৃকের প্রধান কার্যালয়ে ৪২টি বাণিজ্যিক প্লটের একটি তালিকা পাঠান। এতে ওই ৯টি প্লটও রয়েছে। ওই বছরের ২০ মার্চ জাগৃকের তৎকালীন চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বোর্ডসভায় এগুলোসহ আরও কিছু প্লট নিলামে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৪২টি বাণিজ্যিক প্লটসহ ৬৩টি প্লট গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সময়ই শ্রেণি পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ১৯৭তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিরপুর-১ সেকশনের ৮০ ফুট সড়কের

পাশের আবাসিক জমির মূল্য কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ টাকা ধরা হয়। সে হিসাবে এসব জমির দাম ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো হয়। কিন্তু বাস্তবে এখানে বাণিজ্যিক প্লটে কাঠাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য তিন কোটি টাকার মতো। সেই হিসাবে জমির মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৮৩ কোটি টাকা। কর্তৃপক্ষের ভূমি শাখা ও আইন শাখাকে সংশ্লিষ্টরা কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক প্লটকে আবাসিক করে তা বরাদ্দ দিয়ে সরকারের প্রায় ৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন করে। সমিতির লোকজন জমি বরাদ্দ নিয়েই একটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে।

তথ্যমতে, জাগৃকের ২১০তম বোর্ডসভায় চিড়িয়াখানা রোডের জি ব্লকের ওই প্লটের জন্য মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকসহ ২৭ জন আবেদন করেন। তাদের আবেদনের পর ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর ঢাকা ডিভিশনের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী একটি প্রতিবেদন দেন। এতে বলা হয়, নকশা অনুযায়ী সেখানে বাণিজ্যিক প্লট ২৫ থেকে ৩৩ পর্যন্ত চিহ্নিত আছে। বর্তমানে দুটি সমিতি এসব জমি দখলে রেখে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে।

জানা গেছে, বহু বছর ধরে দুটি সমিতি জমি বরাদ্দ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তাদের আবেদন জাগৃকের ৭৬তম ও ১০০তম বোর্ডসভায় ওঠে। এভাবে ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তা বোর্ডসভায় উঠছিল। এক যুগ পর গত বছরের ১৫ জুলাই ২১০তম বোর্ডসভায় জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। একসময় যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, তারাই দুটি সমিতির নামে সমঝোতার কাগজপত্র দাখিল করেন। সমঝোতার সেই কাগজপত্র আর ত্রিপক্ষীয় মামলা-মোকাদ্দমার বিষয়েও কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তার মতামতও আমলে নেয় বোর্ডসভা। সমিতির সদস্য সবাই মুক্তিযোদ্ধা বলেও উল্লেখ করা হয়। জাগৃকের ভূমি শাখা আর আইন শাখার অনাপত্তি পেয়ে বোর্ড দুটি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর একটি হলো- বাণিজ্যিক প্লটকে আবাসিক গ্রুপ প্লটে রূপান্তর এবং গ্রুপ প্লট হিসেবে আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের নামে প্রচলিত মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877